Bhoot Chaturdashi ভূত চতুর্দশী তিথি সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন মতামত রয়েছে। কেউ বলেন দেবী কালী চামুণ্ডা রূপে ভূত এবং প্রেতাত্মা সঙ্গে নিয়ে ভক্তের বাড়িতে আসেন অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটাতে। কারওর মতে এই তিথিতে দৈত্যরাজ বলি পৃথিবীতে পূজা নিতে আসেন, সঙ্গে আসে নানা অশুভ শক্তি, অর্থাৎ ভূত এবং প্রেতাত্মা। অনেকে আবার মনে করেন পূর্বপুরুষের আত্মা এই তিথিতে মর্ত্যলোকে আসেন। তবে সব ক্ষেত্রেই অশুভ শক্তির আগমনের উল্লেখ পাওয়া যায়।
এই অশুভ শক্তির থেকে মুক্তির উদ্দেশ্যেই জ্বালানো হয় চোদ্দ প্রদীপ। বিশ্বাস করা হয় এই চোদ্দ প্রদীপের আলো সংসারে সকল প্রকার অশুভ শক্তির অবসান ঘটায়। এই তিথিতে চোদ্দ প্রকার শাক খাওয়ার চল রয়েছে। সেগুলি হল— ওল, কেউ, বেতো, কালকাসুন্দে, নিমপাতা, জয়ন্তী, সরিষা, শাঞ্চে, হিলঞ্চ, পলতা, শুলফা, গুলঞ্চ, ঘেঁটু, শুশুনি (পণ্ডিত রঘুনন্দনের মতে)। যদিও স্থানবিশেষে শাকের নাম পরিবর্তিত হতে পারে। অশুভ শক্তি বিনাশের উদ্দেশ্যে স্নান করে এই চোদ্দশাক খেয়ে চোদ্দ প্রদীপ জ্বালানোই হল ভূত চতুর্দশীর রীতি।
পুরাণ অনুসারে একবার যমরাজ যম দূতদের জিগ্যেস করেন যে কোনও জীবের প্রাণ হরণ করার সময় তাঁদের কারও ওপর কী কোনও দয়া মায়া আসে না? প্রথমে কিছুটা সঙ্কোচ করে তারপর যমদূতরা যমরাজকে জানায় যে তাদের মৃত্য়ুপথযাত্রী কোনও ব্যক্তির উপরেই তিলমাত্র দয়া হয় না। কিন্তু দ্বিতীয় বার যমরাজ একই প্রশ্ন করায় যমদূতরা একটি ঘটনা সম্পর্কে তাঁকে জানায়।
তাঁরা একটি ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন যে, একবার হেম নামক এক রাজার পত্নী একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। পুত্র সন্তানের জন্মের পর জ্যোতিষীরা নক্ষত্র গণনা করে জানান যে, বিবাহের চার দিন পরেই সেই বালকের মৃত্যু হবে। এই ভবিষ্যদ্বাণী শুনে মহারাজা হেম ঠিক করেন যে তিনি কখনোই পুত্রের বিবাহ দেবেন না। সেই মতো তিনি ওই বালককে যমুনা নদীর তীরে একটি গুহায় ব্রহ্মচারী হিসেবে লালন পালন করতে শুরু করেন।
রাজপুত্র যৌবনে পদার্পণ করার পরে একদিন সেই যমুনা তীরে মহারাজা হংসের পুত্রী বিহার করতে আসেন। রাজকুমার সেই রাজকন্যাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে যান এবং তাঁরা গন্ধর্ব মতে বিবাহ করেন। জ্যোতিষ গণনা সঠিক প্রমাণ করে বিয়ের ঠিক চার দিন পরেই রাজপুত্রের মৃত্যু হয়। মৃত স্বামীর জন্য হৃদয় আকুল করা বিলাপ শুরু করেন রাজকন্যা।
যমদূতরা যমরাজকে বলেন যে সেই নববিবাহিতার বিলাপ শুনে তাদের কঠিন হৃদয়ও কেঁপে ওঠে। ওই রাজকুমারের প্রাণ হরণের সময় তাদের চোখ থেকেও জল গড়িয়ে পড়ে। তখন এক যমদূত যমরাজকে জিগ্যেস করেন, ‘অকাল মৃত্যু থেকে মানুষকে বাঁচানোর কী কোনও উপায় নেই?’ তখন তাঁদের একটি উপায় জানান যমরাজ। তিনি বলেন, অকাল মৃত্যু থেকে মুক্তি পাওযার জন্য ভূত চতুর্দশীর দিনে নিয়ম মেনে পুজো ও দীপদান করতে হবে। ভূত চতুর্দশীতে দীপদান করলে আর অকাল মৃত্যুর ভয় থাকে না। এই কারণেই ভূত চতুর্দশীতে যমের নামে প্রদীপ জ্বালানোর প্রথা প্রচলিত হয়।
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুসারে— Bhoot Chaturdashi চতুর্দশী শুরু: বাংলা: ১৩ কার্তিক, বুধবার। ইংরেজি: ৩০ অক্টোবর, বুধবার। সময়: দুপুর ১টা ১৭ মিনিট। চতুর্দশী শেষ: বাংলা: ১৪ কার্তিক, বৃহস্পতিবার। ইংরেজি: ৩১ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার। সময়: দুপুর ৩টে ৫৩ মিনিট। ভূত চতুর্দশী, শ্রীশ্রী ধর্মরাজ পূজা।
গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা অনুসারে— Bhoot Chaturdashi চতুর্দশী শুরু: বাংলা: ১৩ কার্তিক, বুধবার। ইংরেজি– ৩০ অক্টোবর, বুধবার। সময়: দুপুর ১২টা ৫৯ মিনিট ৪৩ সেকেন্ড। চতুর্দশী শেষ: বাংলা: ১৪ কার্তিক, বৃহস্পতিবার। ইংরেজি: ৩১ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার। সময়: দুপুর ৩টে ৭ মিনিট ৪২ সেকেন্ড।